ওয়াশিংটনে বিমান-হেলিকপ্টার সংঘর্ষে কেউ বেঁচে নেই
বিবিসি
প্রকাশ : ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ২২:৪৬
আমেরিকান এয়ারলাইন্সের একটি আঞ্চলিক যাত্রীবাহী বিমান ও মার্কিন সেনাবাহিনীর একটি ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারের মধ্যে মাঝআকাশে সংঘর্ষে আর কেই বেঁচে নেই বলে বিবিসি জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে ডোনাল্ড রিগ্যান ন্যাশনাল এয়ারপোর্টের কাছে সংঘঠিত এ দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩০টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে জীবিত কাউকেই পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করে বলেছে, এখন পর্যন্ত ৩০টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে— এর মধ্যে ২৮ জন বিমানের যাত্রী এবং দুজন হেলিকপ্টারের ক্রু সদস্য।
এর আগে স্থানীয় সময় বুধবার রাত ৮টা ৪৮ মিনিটে আমেরিকান ইগল ফ্লাইট ৫৩৪২ নামের বিমানটি কানসাসের উইচিটা থেকে উড্ডয়ন করে। পরে ওয়াশিংটন ডিসির রোনাল্ড রিগ্যান এয়ারপোর্টে অবতরণের সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
বিমানটি PSA এয়ারলাইন্স পরিচালিত একটি CRJ-700 মডেলের বিমান ছিল। এতে ৬০ জন যাত্রী ও ৪ জন ক্রু সদস্য ছিলেন। যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ছিলেন আইস স্কেটার ও তাদের কোচ।
নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ইভজেনিয়া শিশকোভা ও ভাদিম নওমভ নামে রাশিয়ান বংশোদ্ভূত সাবেক দুই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। যারা উইচিটায় একটি স্কেটিং ইভেন্ট শেষে ফিরছিলেন।
মার্কিন পরিবহন সচিব শন ডাফির মতে, বিমান ও হেলিকপ্টার- উভয়েই নিয়মিত ফ্লাইট পথ অনুসরণ করছিল এবং আবহাওয়াও পরিষ্কার ছিল। মার্কিন সেনাবাহিনীর ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারটি ছিল একটি প্রশিক্ষণ ফ্লাইট এবং এতে তিনজন সেনাসদস্য ছিলেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সংঘর্ষের পর মাঝআকাশে বিস্ফোরণ ঘটে এবং আগুনের গোলা দেখা যায়। এ সময় কন্ট্রোল টাওয়ারের এক কর্মকর্তা সঙ্গে সঙ্গেই অন্য উড়োজাহাজগুলোকে পথ পরিবর্তনের নির্দেশ দেন।
ওয়াশিংটন ডিসির ফায়ার চিফ জন ডনেলি জানান, পোটোম্যাক নদীতে বিমানের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। তবে প্রচণ্ড ঠান্ডা, ভারি বাতাস ও নদীতে বরফ থাকায় তা উদ্ধার কাজে বড় বাধা সৃষ্টি করেছে।
তিনি বলেন, আমরা সবগুলো মৃতদেহ খুঁজে বের করব এবং তাদের স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দেব।
মার্কিন জাতীয় পরিবহণ নিরাপত্তা বোর্ড (NTSB) দুর্ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে এবং আমেরিকান এয়ারলাইন্স সম্পূর্ণ সহযোগিতা করছে। এদিকে একটি ডুবুরি দল বিমানের ব্ল্যাকবক্সের একটি রেকর্ডার উদ্ধার করেছে। তবে আরও তথ্য সংগ্রহের জন্য অনুসন্ধান চলছে।
এই দুর্ঘটনাটি গত এক দশকের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।
পুরনো ট্র্যাজেডির স্মরণ
এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ১৯৮২ সালের আরেকটি বিমান দুর্ঘটনার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। যখন এয়ার ফ্লোরিডা ফ্লাইট ৯০ পোটোম্যাক নদীর ১৪তম স্ট্রিট ব্রিজে বিধ্বস্ত হয়ে ৭৪ জন নিহত হয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রে সর্বশেষ মারাত্মক বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছিল ২০০৯ সালে। তখন কোলগান এয়ার ফ্লাইট নিউইয়র্কে বিধ্বস্ত হয়ে ৫০ জন নিহত হয়।
এদিকে এই দুর্ঘটনায় মার্কিন স্কেটিং কমিউনিটিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে এবং ক্রেমলিনও নিহত রুশ নাগরিকদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে।
ট্রাম্পের মন্তব্য
ওয়াশিংটনের বিমান দুর্ঘটনাকে ‘ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি এই দুর্ঘটনা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত বলেও জানিয়েছেন।
সেই সঙ্গে ট্রাম্প প্রশ্ন তুলে বলেছেন, নিয়ন্ত্রণ টাওয়ার কেন হেলিকপ্টারকে উপযুক্ত নির্দেশ দেয়নি? এটা এমন একটি ঘটনা, যা প্রতিরোধ করা যেত। তিনি তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশ্যাল-এই প্রশ্ন তোলেন।
বাংলাদেশ জার্নাল/এমপি